বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ঘিরে দলটির বিরুদ্ধে একটি সংঘবদ্ধ অপপ্রচার ও অপকৌশলের জাল তৈরি করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বিএনপি যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে, তবে কোনো ষড়যন্ত্রই জনগণ থেকে দলটিকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না।
রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর বনানীতে বিএনপির প্রবাস সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহে অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্য থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, বিএনপির বিজয় ঠেকাতে আবারও একটি সংঘবদ্ধ অপপ্রচার ও অপকৌশল দৃশ্যমান। এই চক্রান্তের উদ্দেশ্য স্পষ্ট বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের বিশ্বাসীদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করা।
তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আহ্বান জানিয়ে বলেন, অপপ্রচারের জবাব হবে ঐক্য, দায়িত্বশীলতা ও সংগঠনের শক্তি দিয়ে। কোনো অবস্থাতেই কেউ বিভ্রান্ত হবেন না। দলই আমাদের শক্তি, আর জনগণ আমাদের ভরসা।
ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনীতির প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, বিএনপি দায়িত্বশীল দল হিসেবে শুরু থেকেই ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য ধরে রাখতে সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে আসছে। আমরা সবসময় সমঝোতার পথ বেছে নিয়েছি, এমনকি সরকারের সঙ্গেও গণতন্ত্রের স্বার্থে সহযোগিতা করেছি। কিন্তু প্রতিনিয়ত নতুন শর্ত চাপিয়ে সেই পথকে জটিল করে তোলা হচ্ছে।
তিনি সতর্ক করে বলেন, এই শর্তের রাজনীতি গণতন্ত্রের উত্তরণকে বিপদে ফেলছে। এর পরিণতি সম্পর্কে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, জনগণের মনে এখন প্রশ্ন নির্বাচন যথাসময়ে হবে কী না? এ ধরনের সংশয় ও সন্দেহ গণতন্ত্রের জন্য অশুভ সংকেত।
তিনি বলেন, কৌশল ও অপকৌশলের পার্থক্য বুঝতে না পারলে রাজনৈতিক দলগুলো শেষ পর্যন্ত অপশক্তির ফাঁদে পড়তে পারে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
তারেক রহমান জানান, বিএনপি ইতিমধ্যে ৩০০টি আসনেই প্রার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
বলেন, প্রতিটি আসনে একাধিক যোগ্য প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও সবাইকে মনোনয়ন দেয়া সম্ভব নয়। যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আমাদের পাশে ছিলেন, তাদেরও আমরা মূল্যায়ন করছি।
তিনি আরও বলেন, মনোনয়ন না পেলেও কেউ হতাশ হবেন না। ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, আর দলের চেয়ে দেশ বড়। যে প্রার্থী মনোনীত হবেন, তার পক্ষে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন।
রাজনীতির বর্তমান প্রেক্ষাপটে তিনি একটি সতর্কবার্তা দেন।
বলেন, একটি গুপ্ত স্বৈরাচার আবারও সুযোগের অপেক্ষায়। নিজেদের ভেতরের বিভাজন ও মতবিরোধের সুযোগ যেন তারা নিতে না পারে সেজন্য নেতাকর্মীদের সজাগ থাকতে হবে।
তিনি আহ্বান জানান, কোনো আচরণ করবেন না, যাতে পুরো বিএনপি বিব্রত হয়। মনে রাখবেন, আমাদের সংগ্রাম শুধু ক্ষমতার জন্য নয়, জনগণের অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য।
তারেক রহমানের বক্তব্যে উঠে এসেছে বিএনপির দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অবস্থান‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য ও ‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের প্রতিশ্রুতি।
তিনি বলেন, আমরা বিভেদ নয়, ঐক্য চাই। প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্র ঠেকাতে রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি অপরিহার্য। যারা আজ মিথ্যা প্রচারণায় লিপ্ত, তারাই গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় শত্রু।
নির্বাচনের আগে তারেক রহমানের এই বক্তব্যকে বিএনপির রাজনৈতিক কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
তাদের মতে, দলীয় ঐক্য রক্ষার পাশাপাশি তিনি সংগঠনের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা, নির্বাচনী প্রস্তুতি ও বাহ্যিক ষড়যন্ত্র প্রতিরোধে একযোগে বার্তা দিয়েছেন।
রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়ছে, আর তারেক রহমানের বক্তব্য স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দিচ্ছে বিএনপি আগামীর নির্বাচনে শুধু অংশ নেবে না, বরং সংগঠিত প্রতিরোধ ও ঐক্যের রাজনীতিকেই সামনে রাখবে।
বিশ্বাসের প্রতিধ্বনি নিউজ ডেস্ক 



















