বিশ্বাসের প্রতিধ্বনি নিউজ ডেস্কঃ যমুনা ও পদ্মা নদী বেষ্টিত দৌলতপুর, ঘিওর ও শিবালয় উপজেলা নিয়ে গঠিত মানিকগঞ্জ-১ আসনটি দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিকভাবে আলোচিত। এ আসনে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় পার্টি, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি শক্ত অবস্থান তৈরি করলেও বর্তমান সময়ে নির্বাচনী মাঠে সবচেয়ে বেশি সরব দেখা যাচ্ছে বিএনপি ও জামায়াতকে।
১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান মানিকগঞ্জ-১ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বিএনপি আধিপত্য বিস্তার করে। ওই সময়ে হরিরামপুর-শিবালয় আসনে হারুনুর রশিদ খান মুন্নু এবং ঘিওর-দৌলতপুর আসনে খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন নির্বাচিত হন। মুন্নু পরবর্তীতে বিএনপি সরকারের মন্ত্রী হন, আর খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন দায়িত্ব পালন করেন জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ ও বিএনপির মহাসচিব হিসেবে।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এবিএম আনায়ারুল হক জয়ী হয়ে দীর্ঘদিনের চিত্র পাল্টে দেন। এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালে টানা দুইবার আওয়ামী লীগের নাইমুর রহমান দূর্জয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সর্বশেষ ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী সালাউদ্দিন মাহমুদ জাহিদ জয়ী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
২০০৮ সালের পর থেকে আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটিতে পরিণত হওয়া মানিকগঞ্জে গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকান্ড নতুন করে জোরদার হয়। জেলা বিএনপির ৬১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে নতুন নেতৃত্ব তৈরি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় স্থানীয় নেতা কর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা বেড়েছে।
মানিকগঞ্জ-১ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির ১ নম্বর সদস্য এস এ জিন্নাহ কবীর। তিনি জানিয়েছেন, ইতোমধ্যইে ২২টি ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডে ৩১ দফা দাবি নিয়ে উঠান বৈঠক ও প্রচারণা চালানো হয়েছে। পাশাপাশি ঘিওর ও দৌলতপুরে বড় সমাবেশ করছেন তিনি।
এছাড়াও পিছিয়ে নেই প্রয়াত মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে খোন্দকার আকবর হোসেন বাবলু। তিনিও প্রচারণায় সক্রিয় রয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন তার বাবা বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন এবং মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। তার আদর্শে এবং নির্বাচনী এলাকায় দেশনায়ক তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা বাস্তবায়নে জনগনের দৌরগড়ায় গিয়ে জনসংযোগ করছেন তিনি।
বহিষ্কৃত সাবেক যুগ্ম সম্পাদক তোজাম্মেল হক তোজাও নিজস্ব উদ্যোগে মাঠে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘দলের ভেতরে প্রতিযোগিতা থাকলেও ধানের শীষের পক্ষে জনসংযোগ করছেন তিনি। নির্বাচন করার ঘোষনা দিয়ে জনসংযোগ করছেন প্রয়াত মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের কনিষ্ঠ ছেলে খোন্দকার আকতার হামিদ প্রবন এবং জাসাস কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ সভাপতি ও মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা এ্যাড. আমিনুল হক।’
জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ইউরো বাংলা হার্ট হাসপাতালের এমডি আবু বকর সিদ্দিক নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করেছেন এবং বিভিন্ন স্থানে জনসংযোগ করছেন। এ আসনে খেলাফত মজলিস থেকেও প্রার্থী দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আলোচনায় আছেন জেলা কমিটির সহ-সভাপতি মুফতি আশরাফুল আলম এবং শিবালয় উপজেলা কমিটির সভাপতি মুফতি শরিফুল ইসলাম।
অন্যদিকে জাতীয় পার্টি, এনসিপি, সিপিবি বা গণসংহতি আন্দোলনসহ ছোট দলগুলোর তৎপরতা এখনো চোখে পড়েনি।
মানিকগঞ্জ-১ আসনে এখন মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা বিএনপি ও জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীদের ঘিরেই গড়ে উঠেছে। তারা তৃণমূলে প্রচার, উঠান বৈঠক ও জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। অপরদিকে ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পলাতক রয়েছেন। তাদের পক্ষ থেকে এখনও তেমন কোনো কর্মসূচি বা সক্রিয় প্রচারণা দেখা যাচ্ছে না। ফলে এ আসনে আগাম নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে বিএনপি-জামায়াত ঘিরেই।
Reporter Name 



















