বিশ্বাসের প্রতিধ্বনি নিউজ ডেস্কঃ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেছেন, ‘বিশেষজ্ঞ, রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোর দেওয়া মতামত সমন্বয় করে আগামী দু-এক দিনের মধ্যে আলোচনা করে সরকারকে পরামর্শ দেওয়া হবে।’
বুধবার ( ৮ অক্টোবর) দিবাগত রাতে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে তৃতীয় পর্যায়ের পঞ্চম দিনের বৈঠক শেষে ব্রিফিংকালে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আগামী ১৫ অক্টোবর কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে কমিশনের বেশ কিছু কাজ রয়েছে। ‘জুলাই জাতীয় সনদ, ২০২৫’-এর ব্যাপারে আমরা চূড়ান্ত পর্যায়ে আছি। আশা করছি, কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই এর স্বাক্ষর অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পারব।’
তিনি বলেন, ‘যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে কমিশন জুলাই সনদ প্রণয়নের এ পর্যায়ে এসেছে, তার একটি বিশেষ ও পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনও প্রকাশ করা হবে এবং খুব দ্রুতই কমিশন সংশ্লিষ্ট দল ও জোটগুলোকে এ বিষয়ে অবহিত করবে। সেই সঙ্গে আগামী ১৫ অক্টোবর কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই জুলাই সনদ সইয়ের আয়োজন করা হবে।’
আলী রীয়াজ বলেন, ‘বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল সনদ স্বাক্ষরের বিষয়ে প্রস্তুত। আমরা চাই, ১৫ অক্টোবরের মধ্যেই এই ঐতিহাসিক দলিলের আনুষ্ঠানিক স্বাক্ষর অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হোক। শুধু সনদ স্বাক্ষর নয়, একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনও প্রকাশিত হবে। আমরা আশা করছি ১৮-১৯ অক্টোবরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারব।’
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘৫ অক্টোবরের বৈঠকে কমিশন সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেয় যে, ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ বাস্তবায়নে গণভোটের ব্যবস্থা করা হবে। আলোচনার মূল বিষয় ছিল-গণভোট কীভাবে এবং কবে অনুষ্ঠিত হবে, তা নির্ধারণ করা। আমরা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছি, পরামর্শ ও মতামতের জন্য বুধবারের বৈঠকের আগেও তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিশেষজ্ঞরা আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন যে, একটি আদেশ জারি করে গণভোট আয়োজন করতে হবে। এতে দু’টি ভাগ থাকবে— একটি অংশে বৃহত্তম ঐকমত্যের বিষয়গুলো এবং অন্য অংশে নোট অব ডিসেন্ট (লিখিত ভিন্নমত) থাকা বিষয়গুলো থাকবে। পরে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সংবিধান সংস্কার পরিষদ ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ গঠন করা হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গণভোটের অনুমোদন পেলে জুলাই সনদে বর্ণিত সংবিধান সংশ্লিষ্ট সংশোধনগুলো সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কমিশন মনে করছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এক ধরনের ঐকমত্য তৈরি হয়েছে যে, ত্রয়োদশ সংসদকে ‘জুলাই জাতীয় সনদ, ২০২৫’ বাস্তবায়নের জন্য নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সংবিধানের মৌলিক কাঠামোগত পরিবর্তনের ক্ষমতা দিতে হবে। দল ও জোটগুলো চাইছে, রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের সমন্বয়ে কমিশন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকারকে পরামর্শ দিক।’
কমিশনের সহ-সভাপতি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে যে ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা হচ্ছে তা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে প্রবাহিত হবে। আমাদের সবার একটি দায় ও দায়িত্ব আছে। শুধু একটি সনদ স্বাক্ষর করা যথেষ্ট নয়, আমাদের সবার সামনে আরও দীর্ঘ পথ চলার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, আসুন আমরা সবাই মিলে সে পথ চলা অব্যাহত রাখি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জনটি হয়েছে জাতীয় ঐক্যের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটানো। এ জাতীয় ঐক্য আমাদের অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে।’
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার দুপুর ২টা থেকে শুরু হওয়া তৃতীয় পর্যায়ের পঞ্চম বৈঠকে বিএনপি, জাতীয় নাগরিক পার্টি, এবি পার্টিসহ প্রায় ৩০টি রাজনৈতিক দল ও জোটের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন, কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ। এতে আরও অংশ নেন কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান ও ড. মো. আইয়ুব মিয়া।
Reporter Name 



















