4:42 am, Wednesday, 12 November 2025

বৃহস্পতিবার রাতের আমল ও ফজিলত

  • Reporter Name
  • Update Time : 11:02:42 am, Thursday, 11 September 2025
  • 40 Time View

নিউজ ডেস্কঃ আল্লাহ তায়ালা আমাদের জীবনে দিন ও রাত দুটি ধারা রেখেছেন। এর মধ্যে কিছু দিন ও রাতকে বিশেষভাবে বরকতময় করেছেন। এতে সঠিকভাবে আমল করলে দুনিয়া ও আখেরাতে সফলতা লাভ হবে। এমন একটি রাত হলো বৃহস্পতিবার রাত অর্থাৎ জুমার দিনের আগের রাত। বৃহস্পতিবার সূর্যাস্ত থেকে শুক্রবার সুবহে সাদিক পর্যন্ত সময়টা অনেক বরকতপূর্ণ। হাদিসে এ রাতের অনেক ফজিলত, বরকত ও উপকারিতা বর্ণিত হয়েছে।

বান্দার আমল আল্লাহর সামনে উপস্থাপন

এ রাতে পুরো সপ্তাহের আমল আল্লাহর সামনে উপস্থাপন করা হয়। এজন্য বৃহস্পতিবার রোজা রাখতেন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এ বিষয়ে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-

বৃহস্পতি ও সোমবার আল্লাহ তায়ালার সামনে বান্দার আমল উপস্থাপন করা হয়, তাই আমি চাই- আমার আমল পেশ করার সময় আমি যেন রোজা অবস্থায় থাকি। -সুনানে নাসায়ী, ২৩৫৮

গোনাহ মাফ

এ দিনের রোজার সবচেয়ে বড় ফজিলত হলো, এর মাধ্যমে আল্লাহ গোনাহ মাফ করেন। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (গুরুত্বের সাথে) সোম ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখতেন। নবীজিকে জিজ্ঞাসা করা হলো-

আল্লাহর রাসূল! আপনি (গুরুত্বের সাথে) সোম ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখেন! (এর কারণ কী?)। নবীজি বললেন-

সোম ও বৃহস্পতিবারে আল্লাহ সব মুসলিমকে ক্ষমা করে দেন। তবে ওই দুই ব্যক্তি ছাড়া, যারা একে অপরকে বর্জন করেছে। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘পরস্পর মিলে যাওয়া পর্যন্ত এদেরকে আপন অবস্থায় ছেড়ে দাও।’ -সুনানে ইবনে মাজাহ, ১৭৪০

যে মুসলমান পরস্পরের সাথে ঝগড়া করে ও অন্যের প্রতি রাগান্বিত হয় তাদের এই রাতেও ক্ষমা করা হবে না। একইভাবে আত্মীয়-স্বজনের সাথে সম্পর্ক ছিন্নকারীকেও এই রাতে ক্ষমা করা হবে না। এ কারণে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোনো মুসলমানকে অন্য মুসলমানের সাথে তিন দিনের বেশি রাগ করে থাকতে নিষেধ করেছেন। -(বুখারি, হাদিস : ৬০৫৬; মুসলিম ২৫৫৯)।

দরুদ পাঠ

আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জুমার দিনে ও রাতে আমার ওপর দরুদ পাঠ করো, যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরুদ পাঠ করে, আল্লাহ তার ওপর ১০ বার রহমত বর্ষণ করবেন।- আল-বায়হাকী, ৬২০।

আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে আরো বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন ও রাতে আমার ওপর দরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার ১০০টি প্রয়োজন পূরণ করবেন। এর মধ্যে ৭০টি আখিরাতে এবং ৩০টি পৃথিবীতে।- (আল-বায়হাকী, ২৭৬)

দুরুদের অনেক ফজিলত, উপকারিতা ও সওয়াব রয়েছে, এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, যে দরুদ পাঠ করে তার উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয় এবং এটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালবাসার একটি নিদর্শন বহন করে।

দোয়া কবুল

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, পাঁচটি রাত এমন আছে যেগুলোতে দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। ১) শুক্রবারের রাত। ২) রজবের প্রথম রাত। ৩) শব-ই-বরাত (শাবানের পনের তারিখের রাত)। ৫) ঈদের রাত (ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা)। -(বায়হাকী,ঈদের ফজিলত,১৪৯)

হজরত ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদিসে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘হে আলী! শুক্রবার রাতের শেষ তৃতীয়াংশে সাহস করে উঠে পড়ো, কারণ এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় এবং এতে দোয়া কবুল হয়।- (মুসতাদরাক আলাস সহীহাইন, ১১৯০)

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যত মামলা আছে তুলে নেওয়া হবেঃ মির্জা ফখরুল

বৃহস্পতিবার রাতের আমল ও ফজিলত

Update Time : 11:02:42 am, Thursday, 11 September 2025

নিউজ ডেস্কঃ আল্লাহ তায়ালা আমাদের জীবনে দিন ও রাত দুটি ধারা রেখেছেন। এর মধ্যে কিছু দিন ও রাতকে বিশেষভাবে বরকতময় করেছেন। এতে সঠিকভাবে আমল করলে দুনিয়া ও আখেরাতে সফলতা লাভ হবে। এমন একটি রাত হলো বৃহস্পতিবার রাত অর্থাৎ জুমার দিনের আগের রাত। বৃহস্পতিবার সূর্যাস্ত থেকে শুক্রবার সুবহে সাদিক পর্যন্ত সময়টা অনেক বরকতপূর্ণ। হাদিসে এ রাতের অনেক ফজিলত, বরকত ও উপকারিতা বর্ণিত হয়েছে।

বান্দার আমল আল্লাহর সামনে উপস্থাপন

এ রাতে পুরো সপ্তাহের আমল আল্লাহর সামনে উপস্থাপন করা হয়। এজন্য বৃহস্পতিবার রোজা রাখতেন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এ বিষয়ে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-

বৃহস্পতি ও সোমবার আল্লাহ তায়ালার সামনে বান্দার আমল উপস্থাপন করা হয়, তাই আমি চাই- আমার আমল পেশ করার সময় আমি যেন রোজা অবস্থায় থাকি। -সুনানে নাসায়ী, ২৩৫৮

গোনাহ মাফ

এ দিনের রোজার সবচেয়ে বড় ফজিলত হলো, এর মাধ্যমে আল্লাহ গোনাহ মাফ করেন। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (গুরুত্বের সাথে) সোম ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখতেন। নবীজিকে জিজ্ঞাসা করা হলো-

আল্লাহর রাসূল! আপনি (গুরুত্বের সাথে) সোম ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখেন! (এর কারণ কী?)। নবীজি বললেন-

সোম ও বৃহস্পতিবারে আল্লাহ সব মুসলিমকে ক্ষমা করে দেন। তবে ওই দুই ব্যক্তি ছাড়া, যারা একে অপরকে বর্জন করেছে। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘পরস্পর মিলে যাওয়া পর্যন্ত এদেরকে আপন অবস্থায় ছেড়ে দাও।’ -সুনানে ইবনে মাজাহ, ১৭৪০

যে মুসলমান পরস্পরের সাথে ঝগড়া করে ও অন্যের প্রতি রাগান্বিত হয় তাদের এই রাতেও ক্ষমা করা হবে না। একইভাবে আত্মীয়-স্বজনের সাথে সম্পর্ক ছিন্নকারীকেও এই রাতে ক্ষমা করা হবে না। এ কারণে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোনো মুসলমানকে অন্য মুসলমানের সাথে তিন দিনের বেশি রাগ করে থাকতে নিষেধ করেছেন। -(বুখারি, হাদিস : ৬০৫৬; মুসলিম ২৫৫৯)।

দরুদ পাঠ

আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জুমার দিনে ও রাতে আমার ওপর দরুদ পাঠ করো, যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরুদ পাঠ করে, আল্লাহ তার ওপর ১০ বার রহমত বর্ষণ করবেন।- আল-বায়হাকী, ৬২০।

আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে আরো বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন ও রাতে আমার ওপর দরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার ১০০টি প্রয়োজন পূরণ করবেন। এর মধ্যে ৭০টি আখিরাতে এবং ৩০টি পৃথিবীতে।- (আল-বায়হাকী, ২৭৬)

দুরুদের অনেক ফজিলত, উপকারিতা ও সওয়াব রয়েছে, এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, যে দরুদ পাঠ করে তার উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয় এবং এটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালবাসার একটি নিদর্শন বহন করে।

দোয়া কবুল

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, পাঁচটি রাত এমন আছে যেগুলোতে দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। ১) শুক্রবারের রাত। ২) রজবের প্রথম রাত। ৩) শব-ই-বরাত (শাবানের পনের তারিখের রাত)। ৫) ঈদের রাত (ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা)। -(বায়হাকী,ঈদের ফজিলত,১৪৯)

হজরত ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদিসে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘হে আলী! শুক্রবার রাতের শেষ তৃতীয়াংশে সাহস করে উঠে পড়ো, কারণ এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় এবং এতে দোয়া কবুল হয়।- (মুসতাদরাক আলাস সহীহাইন, ১১৯০)