4:32 am, Wednesday, 12 November 2025

বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ কাছাকাছি: প্রধান উপদেষ্টা

  • Reporter Name
  • Update Time : 06:26:17 pm, Monday, 15 September 2025
  • 30 Time View

নিউজ ডেস্কঃ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো জোরদারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস । বিশেষ করে, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, জ্বালানি ও উন্নয়ন সহযোগিতার ক্ষেত্রে সম্পর্ক গভীর করার ওপর তিনি জোর দেন। পাশাপাশি তিনি বলেন, শুল্ক ইস্যুতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ কাছাকাছি।

সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিঞ্চের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘সহযোগিতার জন্য আপনাদের অনেক ধন্যবাদ। আমরা যা পেয়েছি, তাতে আমরা খুবই আনন্দিত। এটি আমাদের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

প্রধান উপদেষ্টা এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি কার্যালয়ের (ইউএসটিআর) ৩১ জুলাইয়ের সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করেন। সেদিন জানানো হয়, বাংলাদেশি পণ্যের ওপর শুল্কহার ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হবে। ড. ইউনূস এ সিদ্ধান্তকে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের একটি বড় মাইলফলক হিসেবে অভিহিত করেন।

বৈঠকে উভয় পক্ষ বাণিজ্যঘাটতি কমানোর কৌশল নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা, সয়াবিনসহ কৃষিপণ্য আমদানি বাড়ানোর আগ্রহের কথাও জানায়। এ ছাড়া আলোচনায় উঠে আসে জ্বালানি খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধি, যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলপিজি আমদানি, সিভিল এয়ারক্রাফট কেনা, মাদক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ও রোহিঙ্গা মানবিক সংকটের বিষয়গুলো।

ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়াতে প্রস্তুত। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এতে আরও শুল্কছাড়ের সুযোগ তৈরি হবে এবং দুই দেশের মধ্যে টেকসই ও পারস্পরিক উপকারী বাণিজ্য অংশীদারত্ব গড়ে উঠবে। তিনি চলমান দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির খসড়ায় দ্রুত স্বাক্ষরের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের স্বার্থ যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের কাছাকাছি। এ কারণে আলোচনার প্রক্রিয়া আরও সহজ ও সম্ভাবনাময়।’

প্রধান উপদেষ্টা আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত ১১ দফা শ্রম কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাংলাদেশ কাজ করছে। এতে শ্রম মানদণ্ড ও ন্যায্য চর্চা রক্ষায় সরকারের অঙ্গীকার স্পষ্ট। ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ গুরুত্বপূর্ণ খাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ এবং স্বল্প সুদে ঋণ বৃদ্ধির প্রত্যাশা করছে।

ড. ইউনূস বলেন, ‘আমাদের নিশ্চিত করতে হবে, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগের দ্বার যেন আরো প্রশস্ত হয়।’ একই সঙ্গে তিনি মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিদলকে আশ্বস্ত করেন যে, বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত করবে অন্তর্বর্তী সরকার।

যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিঞ্চ বাংলাদেশি পক্ষের গঠনমূলক ভূমিকার প্রশংসা করেন। তিনি দুই দেশের অংশীদারত্ব আরও দৃঢ় হওয়ার বিষয়টিকেও স্বাগত জানান। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা তাঁর সঙ্গে বৈঠক করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যঘাটতি একতরফাভাবে কমানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন। লিঞ্চ বলেন, এত আগে থেকে শুরু হওয়া এই উদ্যোগ আলোচনাকে সহজ করেছে এবং ইতিবাচক ফল দিয়েছে।

লিঞ্চ প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা শক্তিশালী আলোচক দল পাঠিয়েছিলেন। তারা কঠোর পরিশ্রম করেছে এবং কার্যকর ভূমিকা রেখেছে।’ তিনি শুল্কসংক্রান্ত চুক্তি ও আমদানি প্রতিশ্রুতির সময়মতো বাস্তবায়নের গুরুত্বও উল্লেখ করেন।

বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যবিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মুরশেদ, বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান, যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন এবং ইউএসটিআর দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক এমিলি অ্যাশবি।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যত মামলা আছে তুলে নেওয়া হবেঃ মির্জা ফখরুল

বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ কাছাকাছি: প্রধান উপদেষ্টা

Update Time : 06:26:17 pm, Monday, 15 September 2025

নিউজ ডেস্কঃ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো জোরদারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস । বিশেষ করে, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, জ্বালানি ও উন্নয়ন সহযোগিতার ক্ষেত্রে সম্পর্ক গভীর করার ওপর তিনি জোর দেন। পাশাপাশি তিনি বলেন, শুল্ক ইস্যুতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ কাছাকাছি।

সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিঞ্চের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘সহযোগিতার জন্য আপনাদের অনেক ধন্যবাদ। আমরা যা পেয়েছি, তাতে আমরা খুবই আনন্দিত। এটি আমাদের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

প্রধান উপদেষ্টা এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি কার্যালয়ের (ইউএসটিআর) ৩১ জুলাইয়ের সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করেন। সেদিন জানানো হয়, বাংলাদেশি পণ্যের ওপর শুল্কহার ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হবে। ড. ইউনূস এ সিদ্ধান্তকে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের একটি বড় মাইলফলক হিসেবে অভিহিত করেন।

বৈঠকে উভয় পক্ষ বাণিজ্যঘাটতি কমানোর কৌশল নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা, সয়াবিনসহ কৃষিপণ্য আমদানি বাড়ানোর আগ্রহের কথাও জানায়। এ ছাড়া আলোচনায় উঠে আসে জ্বালানি খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধি, যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলপিজি আমদানি, সিভিল এয়ারক্রাফট কেনা, মাদক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ও রোহিঙ্গা মানবিক সংকটের বিষয়গুলো।

ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়াতে প্রস্তুত। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এতে আরও শুল্কছাড়ের সুযোগ তৈরি হবে এবং দুই দেশের মধ্যে টেকসই ও পারস্পরিক উপকারী বাণিজ্য অংশীদারত্ব গড়ে উঠবে। তিনি চলমান দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির খসড়ায় দ্রুত স্বাক্ষরের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের স্বার্থ যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের কাছাকাছি। এ কারণে আলোচনার প্রক্রিয়া আরও সহজ ও সম্ভাবনাময়।’

প্রধান উপদেষ্টা আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত ১১ দফা শ্রম কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাংলাদেশ কাজ করছে। এতে শ্রম মানদণ্ড ও ন্যায্য চর্চা রক্ষায় সরকারের অঙ্গীকার স্পষ্ট। ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ গুরুত্বপূর্ণ খাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ এবং স্বল্প সুদে ঋণ বৃদ্ধির প্রত্যাশা করছে।

ড. ইউনূস বলেন, ‘আমাদের নিশ্চিত করতে হবে, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগের দ্বার যেন আরো প্রশস্ত হয়।’ একই সঙ্গে তিনি মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিদলকে আশ্বস্ত করেন যে, বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত করবে অন্তর্বর্তী সরকার।

যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিঞ্চ বাংলাদেশি পক্ষের গঠনমূলক ভূমিকার প্রশংসা করেন। তিনি দুই দেশের অংশীদারত্ব আরও দৃঢ় হওয়ার বিষয়টিকেও স্বাগত জানান। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা তাঁর সঙ্গে বৈঠক করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যঘাটতি একতরফাভাবে কমানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন। লিঞ্চ বলেন, এত আগে থেকে শুরু হওয়া এই উদ্যোগ আলোচনাকে সহজ করেছে এবং ইতিবাচক ফল দিয়েছে।

লিঞ্চ প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা শক্তিশালী আলোচক দল পাঠিয়েছিলেন। তারা কঠোর পরিশ্রম করেছে এবং কার্যকর ভূমিকা রেখেছে।’ তিনি শুল্কসংক্রান্ত চুক্তি ও আমদানি প্রতিশ্রুতির সময়মতো বাস্তবায়নের গুরুত্বও উল্লেখ করেন।

বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যবিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মুরশেদ, বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান, যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন এবং ইউএসটিআর দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক এমিলি অ্যাশবি।