5:35 am, Wednesday, 12 November 2025

নতুন মধ্যপন্থী জোট গঠনের পথে এনসিপি

জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান থেকে উঠে আসা তরুণদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) দেশের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ সৃষ্টির পথে হাঁটছে। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলটি মধ্যপন্থী ও আদর্শনির্ভর একটি রাজনৈতিক জোট গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে।

দলের শীর্ষ পর্যায়ের সূত্রে জানা গেছে, এনসিপি ইতোমধ্যে কয়েকটি সমমনোভাবাপন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা শুরু করেছে। তরুণ নেতৃত্বের এ দল নিজস্ব রাজনৈতিক অবস্থানকে শক্তিশালী করতে চাইছে একটি স্বাধীন জোট কাঠামোর মাধ্যমে যেখানে মূলধারার দুই প্রধান দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগের বাইরে থেকে একটি “তৃতীয় শক্তি” গঠনের লক্ষ্য দেখা যাচ্ছে।

এনসিপির নেতাদের মতে, দেশের তরুণ ও প্রথমবারের ভোটারদের আকৃষ্ট করাই তাদের মূল রাজনৈতিক কৌশল। দলটি চায় না কোনো বড় দলের ছায়ায় থাকতে; বরং স্বতন্ত্রভাবে নিজেদের ‘বাংলাদেশপন্থা’ আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে চায়।

দলের এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, “আমরা এমন একটি মধ্যপন্থী রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে চাই, যা জনগণের বাস্তব প্রত্যাশা ও মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটাবে। অন্যদের জোটে গিয়ে আত্মহারা হওয়ার কোনো ইচ্ছা আমাদের নেই।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি এনসিপি মধ্যপন্থী দলগুলোকে এক ছাতার নিচে আনতে পারে, তবে তা বাংলাদেশের দ্বিদলীয় রাজনীতিতে একটি নতুন ধারা তৈরি করবে। বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যকার টানাপোড়েনের মধ্যে এনসিপির নেতৃত্বে নতুন জোট গঠনের সম্ভাবনা রাজনৈতিক ভারসাম্যে প্রভাব ফেলতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, “বাংলাদেশে অনেক ছোট দল আছে যারা আদর্শে কাছাকাছি। যদি তারা এনসিপির মতো একটি প্ল্যাটফর্মে একত্র হতে পারে, তাহলে মধ্যপন্থার চর্চা বাস্তব রূপ পেতে পারে। এটি রাজনীতিতে একটি বিকল্প শক্তি গড়ে তুলতে সক্ষম হবে।”

বিএনপির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একটি সূত্র জানায়, এনসিপিসহ মধ্যপন্থী দলগুলো আলাদা জোট গঠন করলে বিএনপি তা কৌশলগতভাবে নেতিবাচকভাবে দেখবে না।

তাদের মতে, এতে জামায়াতের সঙ্গে অতিরিক্ত নির্ভরতার প্রয়োজন কমে যাবে, যা বিএনপির জন্য একধরনের রাজনৈতিক সুবিধা বয়ে আনতে পারে।

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রয়োজনে এনসিপির সঙ্গে সহযোগিতার ব্যাপারে তারা উন্মুক্ত, যদি উভয়পক্ষের লক্ষ্য সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর হাতিরপুলে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে নয়টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয় যাদের মধ্যে গণসংহতি আন্দোলন, নাগরিক ঐক্য, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, জেএসডি, ভাসানী জনশক্তি পার্টি, এবি পার্টি, গণ অধিকার পরিষদ ও এনসিপি উল্লেখযোগ্য। বৈঠকে নির্বাচনী সহযোগিতা ও রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়।

এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, “আমরা এখন আলোচনা পর্যায়ে আছি। গণঅধিকার পরিষদ ও গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে কথা হয়েছে। জোটের বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি, তবে মধ্যপন্থী শক্তিগুলোকে একত্রিত করার চেষ্টা চলছে।”

দলের সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, “জোট বা আসন ভাগাভাগি নিয়ে এখনো আলোচনা হয়নি। তবে আমাদের দরজা সবার জন্য খোলা।”

বিশ্লেষকদের মতে, এনসিপির নেতৃত্বে গঠিত নতুন মধ্যপন্থী জোট যদি সংগঠিত রূপ নিতে পারে, তবে দেশের তরুণ ভোটারদের বড় একটি অংশকে প্রভাবিত করতে পারবে। এতে দ্বিদলীয় রাজনীতির দীর্ঘদিনের স্থবিরতা কিছুটা ভাঙার সুযোগ তৈরি হবে।

আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে তাই রাজনৈতিক মহলে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এনসিপি ও তাদের সম্ভাব্য জোট।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যত মামলা আছে তুলে নেওয়া হবেঃ মির্জা ফখরুল

নতুন মধ্যপন্থী জোট গঠনের পথে এনসিপি

Update Time : 04:53:29 pm, Wednesday, 29 October 2025

জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান থেকে উঠে আসা তরুণদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) দেশের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ সৃষ্টির পথে হাঁটছে। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলটি মধ্যপন্থী ও আদর্শনির্ভর একটি রাজনৈতিক জোট গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে।

দলের শীর্ষ পর্যায়ের সূত্রে জানা গেছে, এনসিপি ইতোমধ্যে কয়েকটি সমমনোভাবাপন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা শুরু করেছে। তরুণ নেতৃত্বের এ দল নিজস্ব রাজনৈতিক অবস্থানকে শক্তিশালী করতে চাইছে একটি স্বাধীন জোট কাঠামোর মাধ্যমে যেখানে মূলধারার দুই প্রধান দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগের বাইরে থেকে একটি “তৃতীয় শক্তি” গঠনের লক্ষ্য দেখা যাচ্ছে।

এনসিপির নেতাদের মতে, দেশের তরুণ ও প্রথমবারের ভোটারদের আকৃষ্ট করাই তাদের মূল রাজনৈতিক কৌশল। দলটি চায় না কোনো বড় দলের ছায়ায় থাকতে; বরং স্বতন্ত্রভাবে নিজেদের ‘বাংলাদেশপন্থা’ আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে চায়।

দলের এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, “আমরা এমন একটি মধ্যপন্থী রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে চাই, যা জনগণের বাস্তব প্রত্যাশা ও মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটাবে। অন্যদের জোটে গিয়ে আত্মহারা হওয়ার কোনো ইচ্ছা আমাদের নেই।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি এনসিপি মধ্যপন্থী দলগুলোকে এক ছাতার নিচে আনতে পারে, তবে তা বাংলাদেশের দ্বিদলীয় রাজনীতিতে একটি নতুন ধারা তৈরি করবে। বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যকার টানাপোড়েনের মধ্যে এনসিপির নেতৃত্বে নতুন জোট গঠনের সম্ভাবনা রাজনৈতিক ভারসাম্যে প্রভাব ফেলতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, “বাংলাদেশে অনেক ছোট দল আছে যারা আদর্শে কাছাকাছি। যদি তারা এনসিপির মতো একটি প্ল্যাটফর্মে একত্র হতে পারে, তাহলে মধ্যপন্থার চর্চা বাস্তব রূপ পেতে পারে। এটি রাজনীতিতে একটি বিকল্প শক্তি গড়ে তুলতে সক্ষম হবে।”

বিএনপির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একটি সূত্র জানায়, এনসিপিসহ মধ্যপন্থী দলগুলো আলাদা জোট গঠন করলে বিএনপি তা কৌশলগতভাবে নেতিবাচকভাবে দেখবে না।

তাদের মতে, এতে জামায়াতের সঙ্গে অতিরিক্ত নির্ভরতার প্রয়োজন কমে যাবে, যা বিএনপির জন্য একধরনের রাজনৈতিক সুবিধা বয়ে আনতে পারে।

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রয়োজনে এনসিপির সঙ্গে সহযোগিতার ব্যাপারে তারা উন্মুক্ত, যদি উভয়পক্ষের লক্ষ্য সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর হাতিরপুলে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে নয়টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয় যাদের মধ্যে গণসংহতি আন্দোলন, নাগরিক ঐক্য, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, জেএসডি, ভাসানী জনশক্তি পার্টি, এবি পার্টি, গণ অধিকার পরিষদ ও এনসিপি উল্লেখযোগ্য। বৈঠকে নির্বাচনী সহযোগিতা ও রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়।

এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, “আমরা এখন আলোচনা পর্যায়ে আছি। গণঅধিকার পরিষদ ও গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে কথা হয়েছে। জোটের বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি, তবে মধ্যপন্থী শক্তিগুলোকে একত্রিত করার চেষ্টা চলছে।”

দলের সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, “জোট বা আসন ভাগাভাগি নিয়ে এখনো আলোচনা হয়নি। তবে আমাদের দরজা সবার জন্য খোলা।”

বিশ্লেষকদের মতে, এনসিপির নেতৃত্বে গঠিত নতুন মধ্যপন্থী জোট যদি সংগঠিত রূপ নিতে পারে, তবে দেশের তরুণ ভোটারদের বড় একটি অংশকে প্রভাবিত করতে পারবে। এতে দ্বিদলীয় রাজনীতির দীর্ঘদিনের স্থবিরতা কিছুটা ভাঙার সুযোগ তৈরি হবে।

আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে তাই রাজনৈতিক মহলে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এনসিপি ও তাদের সম্ভাব্য জোট।