4:48 am, Wednesday, 12 November 2025

তিস্তা প্রকল্পে বেইজিংয়ের সঙ্গে এগোচ্ছে ঢাকা

  • Reporter Name
  • Update Time : 10:16:18 am, Tuesday, 16 September 2025
  • 35 Time View

নিউজ ডেস্কঃ চীনের সহায়তায় বহুল আলোচিত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চায় বাংলাদেশ। এ জন্য দেশটির কাছে ঋণও চেয়েছে ঢাকা। আর এ প্রকল্পটিতে বেইজিংয়েরও যে তীব্র আগ্রহ রয়েছে, তা পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়ামকে জানালেন ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।

সোমবার সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে ঘণ্টাব্যপী বৈঠক করেন চীনের রাষ্ট্রদূত। বৈঠক সূত্র জানায়, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে চীনের কাছে প্রায় ৫৫ কোটি ডলার ঋণ চেয়েছে বাংলাদেশ। আর এ ঋণের বিষয়েও ইতিবাচক দেশটি। তার পরিপ্রেক্ষিতে এ প্রকল্পটির বিষয়ে চীন যে তীব্র আগ্রহী, তা সচিবকে জানিয়েছেন রাষ্ট্রদূত। বাংলাদেশও বিষয়টি ইতিবাচকভাবে নিয়েছে।

এ ছাড়া বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরের পর সেই বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোর হালনাগাদ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি চীনের অর্থায়নে বাংলাদেশে হাসপাতাল নির্মাণসহ অন্যান্য প্রকল্পের বিষয়গুলোও ছিল।

এ ছাড়া চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের নেওয়া বৈশ্বিক সুশাসন উদ্যোগে (জিজিআই) যোগ দিতে বাংলাদেশকে আগেই আমন্ত্রণ জানিয়েছিল চীন। পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠকে জিজিআইর বিস্তারিত এবং এ উদ্যোগ নিয়ে চীনের প্রেসিডেন্টের আগ্রহের কথা জানানো হয়। জুলাই গণঅভুত্থ্যানের পর বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ প্রায় ৮০ কোটি ডলারের ওপর এসেছে, যা সবচেয়ে বেশি বলেও জানিয়েছেন দূত।

নাম না প্রকাশের শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, তিস্তার বিষয়ে চীন বেশ আগ্রহী। বিষয়টিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সঙ্গে তারা কাজ করছে বলে জানানো হয়। চলতি বছরের শেষের দিকে তিস্তা প্রকল্প যাচাইয়ের জন্য বাংলাদেশে আসছে একটি কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল। এ বিষয়টি পররাষ্ট্র সচিবকে জানিয়েছেন রাষ্ট্রদূত।

গত মার্চে প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরের পর তিস্তা প্রকল্প এগিয়ে নিতে কাজ শুরু করে অন্তর্বর্তী সরকার। এর পরিপ্রেক্ষিতে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় পরিকল্পনা কমিশনে মে মাসে একটি চিঠি দেয়। তাতে তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নে চীনের ঋণ নেওয়ার বিষয়টি জানায়। পরে গত জুলাইয়ে চীনা দূতাবাসে চিঠি পাঠায় ইআরডি। চিঠিতে ‘কম্প্রিহেনসিভ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রেস্টোরেশন অব তিস্তা রিভার প্রজেক্ট’ বাস্তবায়নে চীনের কাছে ৫৫ কোটি ডলার চেয়েছে বাংলাদেশ। ঢাকা চলতি বছরের মধ্যেই এ প্রকল্পের আর্থিক চুক্তি সই করতে চায়। এ লক্ষ্যে কাজ এগিয়ে নিচ্ছে।

তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে অতীতে আগ্রহ দেখিয়েছিল চীন ও ভারত। ২০২৪ সালের মে মাসের শুরুতে বাংলাদেশ সফরে এসে ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়েত্রা তিস্তা প্রকল্পে ভারতের বিনিয়োগের আগ্রহের কথা জানিয়েছিলেন। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারও চেয়েছিল, প্রকল্পটিতে যেন ভারত অর্থায়ন করে।

চীন সফর নিয়ে ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘চীন তো রেডি; কিন্তু আমি চাচ্ছি যে এটা ভারত করে দিক, এই প্রকল্পটি করলে এই প্রকল্পের জন্য যা দরকার, ইন্ডিয়া দিতেই থাকবে।’

তিস্তা প্রকল্পের প্রথম পর্যায় বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৭৫ কোটি ডলার। এর মধ্যে চীন থেকে ঋণ চাওয়া হয়েছে ৫৫ কোটি ডলার। বাকিটা করা হবে সরকারি অর্থায়নে। ২০২৬ সালে এ প্রকল্পের কাজ শুরু করে ২০২৯ সালে শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

তিস্তা প্রকল্প নিয়ে এর আগে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন সমকালকে জানিয়েছিলেন, তিস্তা প্রকল্পে আগ্রহ রয়েছে বেইজিংয়ের। তবে এ প্রকল্প কাকে দিয়ে বাস্তবায়ন করাবে, সে সিদ্ধান্ত ঢাকার। আর বাংলাদেশের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাবে চীন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, তিস্তা প্রকল্প নিয়ে কৌশলী ঢাকা। কারণ বাংলাদেশের কয়েকটি নদীর উৎপত্তিস্থল চীনে। তারা নদীতে বেশ কয়েকটি বাঁধ নির্মাণ করছে। ফলে তিস্তার মতো কৌশলগত একটি প্রকল্পে চীনের সংশ্লিষ্টতা থাকলে নদীর পানি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখার ক্ষেত্রে আলোচনার একটি সুযোগ থাকবে।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যত মামলা আছে তুলে নেওয়া হবেঃ মির্জা ফখরুল

তিস্তা প্রকল্পে বেইজিংয়ের সঙ্গে এগোচ্ছে ঢাকা

Update Time : 10:16:18 am, Tuesday, 16 September 2025

নিউজ ডেস্কঃ চীনের সহায়তায় বহুল আলোচিত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চায় বাংলাদেশ। এ জন্য দেশটির কাছে ঋণও চেয়েছে ঢাকা। আর এ প্রকল্পটিতে বেইজিংয়েরও যে তীব্র আগ্রহ রয়েছে, তা পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়ামকে জানালেন ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।

সোমবার সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে ঘণ্টাব্যপী বৈঠক করেন চীনের রাষ্ট্রদূত। বৈঠক সূত্র জানায়, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে চীনের কাছে প্রায় ৫৫ কোটি ডলার ঋণ চেয়েছে বাংলাদেশ। আর এ ঋণের বিষয়েও ইতিবাচক দেশটি। তার পরিপ্রেক্ষিতে এ প্রকল্পটির বিষয়ে চীন যে তীব্র আগ্রহী, তা সচিবকে জানিয়েছেন রাষ্ট্রদূত। বাংলাদেশও বিষয়টি ইতিবাচকভাবে নিয়েছে।

এ ছাড়া বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরের পর সেই বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোর হালনাগাদ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি চীনের অর্থায়নে বাংলাদেশে হাসপাতাল নির্মাণসহ অন্যান্য প্রকল্পের বিষয়গুলোও ছিল।

এ ছাড়া চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের নেওয়া বৈশ্বিক সুশাসন উদ্যোগে (জিজিআই) যোগ দিতে বাংলাদেশকে আগেই আমন্ত্রণ জানিয়েছিল চীন। পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠকে জিজিআইর বিস্তারিত এবং এ উদ্যোগ নিয়ে চীনের প্রেসিডেন্টের আগ্রহের কথা জানানো হয়। জুলাই গণঅভুত্থ্যানের পর বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ প্রায় ৮০ কোটি ডলারের ওপর এসেছে, যা সবচেয়ে বেশি বলেও জানিয়েছেন দূত।

নাম না প্রকাশের শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, তিস্তার বিষয়ে চীন বেশ আগ্রহী। বিষয়টিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সঙ্গে তারা কাজ করছে বলে জানানো হয়। চলতি বছরের শেষের দিকে তিস্তা প্রকল্প যাচাইয়ের জন্য বাংলাদেশে আসছে একটি কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল। এ বিষয়টি পররাষ্ট্র সচিবকে জানিয়েছেন রাষ্ট্রদূত।

গত মার্চে প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরের পর তিস্তা প্রকল্প এগিয়ে নিতে কাজ শুরু করে অন্তর্বর্তী সরকার। এর পরিপ্রেক্ষিতে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় পরিকল্পনা কমিশনে মে মাসে একটি চিঠি দেয়। তাতে তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নে চীনের ঋণ নেওয়ার বিষয়টি জানায়। পরে গত জুলাইয়ে চীনা দূতাবাসে চিঠি পাঠায় ইআরডি। চিঠিতে ‘কম্প্রিহেনসিভ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রেস্টোরেশন অব তিস্তা রিভার প্রজেক্ট’ বাস্তবায়নে চীনের কাছে ৫৫ কোটি ডলার চেয়েছে বাংলাদেশ। ঢাকা চলতি বছরের মধ্যেই এ প্রকল্পের আর্থিক চুক্তি সই করতে চায়। এ লক্ষ্যে কাজ এগিয়ে নিচ্ছে।

তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে অতীতে আগ্রহ দেখিয়েছিল চীন ও ভারত। ২০২৪ সালের মে মাসের শুরুতে বাংলাদেশ সফরে এসে ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়েত্রা তিস্তা প্রকল্পে ভারতের বিনিয়োগের আগ্রহের কথা জানিয়েছিলেন। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারও চেয়েছিল, প্রকল্পটিতে যেন ভারত অর্থায়ন করে।

চীন সফর নিয়ে ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘চীন তো রেডি; কিন্তু আমি চাচ্ছি যে এটা ভারত করে দিক, এই প্রকল্পটি করলে এই প্রকল্পের জন্য যা দরকার, ইন্ডিয়া দিতেই থাকবে।’

তিস্তা প্রকল্পের প্রথম পর্যায় বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৭৫ কোটি ডলার। এর মধ্যে চীন থেকে ঋণ চাওয়া হয়েছে ৫৫ কোটি ডলার। বাকিটা করা হবে সরকারি অর্থায়নে। ২০২৬ সালে এ প্রকল্পের কাজ শুরু করে ২০২৯ সালে শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

তিস্তা প্রকল্প নিয়ে এর আগে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন সমকালকে জানিয়েছিলেন, তিস্তা প্রকল্পে আগ্রহ রয়েছে বেইজিংয়ের। তবে এ প্রকল্প কাকে দিয়ে বাস্তবায়ন করাবে, সে সিদ্ধান্ত ঢাকার। আর বাংলাদেশের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাবে চীন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, তিস্তা প্রকল্প নিয়ে কৌশলী ঢাকা। কারণ বাংলাদেশের কয়েকটি নদীর উৎপত্তিস্থল চীনে। তারা নদীতে বেশ কয়েকটি বাঁধ নির্মাণ করছে। ফলে তিস্তার মতো কৌশলগত একটি প্রকল্পে চীনের সংশ্লিষ্টতা থাকলে নদীর পানি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখার ক্ষেত্রে আলোচনার একটি সুযোগ থাকবে।