9:12 pm, Saturday, 8 November 2025

জেন–জি আন্দোলনে নিহতরা ‘শহীদ’, পরিবার পাবে ১০ লাখ রুপি: নতুন প্রধানমন্ত্রী

  • Reporter Name
  • Update Time : 04:26:45 pm, Sunday, 14 September 2025
  • 30 Time View

নিউজ ডেস্কঃ সুশীলা কারকি আজ রোববার নেপালের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। নেপাল সরকারের সদর দপ্তর সিংহ দরবারে দায়িত্ব নেওয়ার আগে সকালে তিনি লাইন চৌরের শহীদ স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সেখানে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী কারকি কিছু সিদ্ধান্তে সই করেন।

নেপালি সংবাদমাধ্যম হিমালয়ান টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, এসব সিদ্ধান্তের মাধ্যমে জেন-জি আন্দোলনে নিহতদের পরিবারকে ১০ লাখ রুপি সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে নিহতদের শহীদ ঘোষণা করে সরকার।

এ ছাড়া, সরকার জানিয়েছে, আন্দোলনে আহত ১৩৪ জন বিক্ষোভকারী ও ৫৭ জন পুলিশ সদস্যের জন্য বিনা খরচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে আন্দোলনে হওয়া ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, এ পর্যন্ত আন্দোলনে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭২ জনে। তাঁদের মধ্যে ৫৯ জন বিক্ষোভকারী, ১০ জন বন্দী ও ৩ জন পুলিশ সদস্য।

অপরদিকে, নেপালের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো প্রেসিডেন্টের কাছে পার্লামেন্ট পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছে। প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পৌডেল গত শুক্রবার পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। নেপালি কংগ্রেস, সিপিএন-ইউএমএল ও মাওবাদী সেন্টারসহ গতকাল শনিবার এক যৌথ বিবৃতিতে আটটি দল অভিযোগ করে, প্রেসিডেন্টের এই পদক্ষেপ সংবিধানবিরোধী। পৌডেল সদ্য নিয়োগ পাওয়া অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কারকির সুপারিশে সংসদ ভেঙে দেন। তবে বিক্ষোভকারীদের অন্যতম প্রধান দাবি ছিল সংসদ ভেঙে দেওয়া।

শনিবার দেওয়া যৌথ বিবৃতিতে আট দলের প্রধান হুইপ স্বাক্ষর করেন। তাঁরা বলেন, প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত ‘সংবিধানবিরোধী’ এবং নেপালের বিচার বিভাগের রায়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। যদিও পার্লামেন্ট ভাঙা ছিল ‘জেন-জি’ প্রজন্মের ছাত্রনেতাদের অন্যতম দাবি। তবে, রাজনৈতিক দলগুলো মনে করছে, এসব দাবি জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই মেটানো উচিত। আগামী বছরের ৫ মার্চ নতুন নির্বাচনের ঘোষণা ইতিমধ্যে দেওয়া হয়েছে।

শনিবার পরে এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট পৌডেল সব পক্ষকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে এই কঠিন ও ভীতিকর পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ সমাধান সম্ভব। তাঁর ভাষায়, ‘সংবিধান বেঁচে আছে, সংসদীয় ব্যবস্থা বেঁচে আছে এবং ফেডারেল গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র এখনো অটুট রয়েছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে আরও কার্যকর গণতন্ত্রের পথে এগোনোর সুযোগ রয়েছে।’

৭৩ বছর বয়সী সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কারকি গত শুক্রবার সংক্ষিপ্ত শপথ অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন। তিনি নেপালের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। কয়েক দিনের মধ্যে তিনি তাঁর মন্ত্রিসভা ঘোষণা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। দুর্নীতিমুক্ত ভাবমূর্তির জন্য কারকি পরিচিত। ‘জেন জেড’ প্রজন্মের ছাত্রনেতারাও তাঁর নেতৃত্বকে সমর্থন জানাচ্ছে।

তবে তাঁর সামনে একাধিক বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে—আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, পুড়িয়ে দেওয়া সংসদ ভবন ও সরকারি স্থাপনা পুনর্গঠন, পরিবর্তন চাইতে থাকা তরুণ প্রজন্মকে আশ্বস্ত করা এবং দেশের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে না—এমন আস্থা সৃষ্টি করা। পাশাপাশি সহিংসতার জন্য দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি করা তাঁর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

বন্যপ্রাণী ও বন রক্ষায় স্বেচ্ছাসেবক নিবন্ধন শুরু করল বন অধিদপ্তর

জেন–জি আন্দোলনে নিহতরা ‘শহীদ’, পরিবার পাবে ১০ লাখ রুপি: নতুন প্রধানমন্ত্রী

Update Time : 04:26:45 pm, Sunday, 14 September 2025

নিউজ ডেস্কঃ সুশীলা কারকি আজ রোববার নেপালের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। নেপাল সরকারের সদর দপ্তর সিংহ দরবারে দায়িত্ব নেওয়ার আগে সকালে তিনি লাইন চৌরের শহীদ স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সেখানে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী কারকি কিছু সিদ্ধান্তে সই করেন।

নেপালি সংবাদমাধ্যম হিমালয়ান টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, এসব সিদ্ধান্তের মাধ্যমে জেন-জি আন্দোলনে নিহতদের পরিবারকে ১০ লাখ রুপি সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে নিহতদের শহীদ ঘোষণা করে সরকার।

এ ছাড়া, সরকার জানিয়েছে, আন্দোলনে আহত ১৩৪ জন বিক্ষোভকারী ও ৫৭ জন পুলিশ সদস্যের জন্য বিনা খরচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে আন্দোলনে হওয়া ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, এ পর্যন্ত আন্দোলনে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭২ জনে। তাঁদের মধ্যে ৫৯ জন বিক্ষোভকারী, ১০ জন বন্দী ও ৩ জন পুলিশ সদস্য।

অপরদিকে, নেপালের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো প্রেসিডেন্টের কাছে পার্লামেন্ট পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছে। প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পৌডেল গত শুক্রবার পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। নেপালি কংগ্রেস, সিপিএন-ইউএমএল ও মাওবাদী সেন্টারসহ গতকাল শনিবার এক যৌথ বিবৃতিতে আটটি দল অভিযোগ করে, প্রেসিডেন্টের এই পদক্ষেপ সংবিধানবিরোধী। পৌডেল সদ্য নিয়োগ পাওয়া অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কারকির সুপারিশে সংসদ ভেঙে দেন। তবে বিক্ষোভকারীদের অন্যতম প্রধান দাবি ছিল সংসদ ভেঙে দেওয়া।

শনিবার দেওয়া যৌথ বিবৃতিতে আট দলের প্রধান হুইপ স্বাক্ষর করেন। তাঁরা বলেন, প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত ‘সংবিধানবিরোধী’ এবং নেপালের বিচার বিভাগের রায়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। যদিও পার্লামেন্ট ভাঙা ছিল ‘জেন-জি’ প্রজন্মের ছাত্রনেতাদের অন্যতম দাবি। তবে, রাজনৈতিক দলগুলো মনে করছে, এসব দাবি জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই মেটানো উচিত। আগামী বছরের ৫ মার্চ নতুন নির্বাচনের ঘোষণা ইতিমধ্যে দেওয়া হয়েছে।

শনিবার পরে এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট পৌডেল সব পক্ষকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে এই কঠিন ও ভীতিকর পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ সমাধান সম্ভব। তাঁর ভাষায়, ‘সংবিধান বেঁচে আছে, সংসদীয় ব্যবস্থা বেঁচে আছে এবং ফেডারেল গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র এখনো অটুট রয়েছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে আরও কার্যকর গণতন্ত্রের পথে এগোনোর সুযোগ রয়েছে।’

৭৩ বছর বয়সী সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কারকি গত শুক্রবার সংক্ষিপ্ত শপথ অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন। তিনি নেপালের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। কয়েক দিনের মধ্যে তিনি তাঁর মন্ত্রিসভা ঘোষণা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। দুর্নীতিমুক্ত ভাবমূর্তির জন্য কারকি পরিচিত। ‘জেন জেড’ প্রজন্মের ছাত্রনেতারাও তাঁর নেতৃত্বকে সমর্থন জানাচ্ছে।

তবে তাঁর সামনে একাধিক বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে—আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, পুড়িয়ে দেওয়া সংসদ ভবন ও সরকারি স্থাপনা পুনর্গঠন, পরিবর্তন চাইতে থাকা তরুণ প্রজন্মকে আশ্বস্ত করা এবং দেশের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে না—এমন আস্থা সৃষ্টি করা। পাশাপাশি সহিংসতার জন্য দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি করা তাঁর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।