2:58 pm, Friday, 14 November 2025

ইলম অর্জনের সুন্নত তরীকা

  • Reporter Name
  • Update Time : 09:00:30 am, Friday, 19 September 2025
  • 39 Time View

একজন সাধারণ মানুষের এমন প্রশ্নে আমি বিস্মিত হই যে,হজরত! ইলম শিখার সুন্নাত তরীকা কী?নামায ফরজ এবং এ ফরজ আদায়ের সুন্নাত তরীকা রয়েছে। ইলম শিক্ষা করাও ফরজ,তাহলে ইলম অর্জনের সুন্নাত তরীকা কী?অনেক হুজুরকে জিজ্ঞেস করেছি, সবাই এড়িয়ে গেছেন।

আমি বললাম,ভাই এ প্রশ্নের উত্তর দিলে আমাদের অস্তিত্ব থাকবেনা! বেদআতে হাসানার রেশমি জালে আমরা এমনভাবে আটকে গেছি যে,মূলকে বেমালুম ভুলে গেছি। মুফতী ফয়জুল্লাহ রহঃ সবসময় বলতেন,বেদআতে হাসানার শুরুটা ভাল মনে হলেও এর পরিণতি কখনো ভালো হয়না।

সাহাবায়ে কেরাম হুজুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছ থেকে যে তরীকায় ইলম শিখেছেন,ইলম অর্জনের সুন্নাত তরীকা এবং সর্বযুগে উন্নত পদ্ধতি সেটাই।

সাহাবায়ে কেরাম ইলম অর্জনের ক্ষেত্রে চার জিনিসকে সর্বপ্রথম নির্বাচন করতেন।
(১) রিজাল বা ব্যাক্তি।আমরা মাদরাসায় ইলম শিখতে যাই, উনারা বা-আমল,আহলুল্লাহকে নির্বাচন করে এমন “ব্যাক্তির”সোহবতে থেকে ইলম শিখতেন।
(২) জায়গা নির্বাচন।সাহাবায় কেরাম আমলের মা-হাওল অর্থাৎ মসজিদে ইলম শিখতেন।
(৩) সময় নির্বাচন। আমরা ইলম অর্জনের জন্য একটা বয়স এবং সে বয়সের পুরোটা সময় জীবন জগৎ থেকে একপ্রকার বিচ্ছিন্ন হয়ে ইলম অর্জন করি।নআর সাহাবায় কেরাম মাহদ সে লাহাদ, তথা বুঝতে শেখার পর থেকে মৃত্যু অবধি ইলম শিখা এবং শিখানো ছিল তাদের দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য একটি অংশ।
(৪) তালীমের সাথে দাওয়াত ও আমলের সমন্বিত মেহনত।আমরা আগে শিখি, পরে আমলের ফিকির করি। সময় থাকলে,ভালো লাগলে তবলীগ করি।অথচ সাহাবায় কেরাম আমলকেই ইলম মনে করতেন।আর যা শিখতেন এবং যখন শিখতেন,তৎক্ষনাৎ তার তবলীগকে ফরজ মনে করতেন।

সাহাবা যুগে ইলম,আমল ও দাওয়াতের মধ্যে তালাযুম ছিল,অর্থাৎ তারা একটিকে আরেকটির জন্য সম্পূরক বা অপরিহার্য মনে করতেন।আমরা তা ভাগ করে ফেলেছি।ফলে ইলমওয়ালা তবলীগওয়ালাকে এবং কখনো তবলীগওয়ালা ইলমওয়ালাকে নিজের মোকাবেল মনে করছে।

এর কারণ,আমরা তালীমের সুন্নাত তরীকা থেকে যোজন যোজন দূরে সরে এসেছি। আমাদের দাওয়াত ও ইবাদাতের সাথে তালীমের উপরও এ পরিমাণ রসম গালিব যে,আজ নকলকেই আমরা আসল মনে করছি।যুগের দোহাই দিয়ে নিত্যনতুন সংস্কারের তোড়ে বিলীন করে দিচ্ছি তালীমের ঐতিহ্য বা শাশ্বতধারা।

আমাদের কথাগুলো এজন্যই হয়ত অনেকের মনপুত হবেনা যে,কথাগুলো আকাবিরদের তরজের খেলাফ? আর সত্যি বলতে, আকাবির মানে আমরা থানভী রহঃ,সর্বোচ্চ হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহঃপর্যন্ত গিয়ে থেমে যাই। সাহাবায় কেরামকে আমরা সীমাহীন মহাব্বত করি,তবে তালীমের ক্ষেত্রে অনুসরণীয় বা অনুকরণসাধ্য আকাবির মনে করিনা। তাই কেয়ামত অত্যাসন্নের দোহাই দিয়ে অবলীলায় গা ভাসিয়ে দিচ্ছি রুসমিয়াতের গড্ডালিকাপ্রবাহে।

কেউ মূলধারার কথা বললে তাকে গলা টিপে ধরে কাফের,বাতিল? বানিয়ে দিচ্ছি ফতোয়া-সন্ত্রাসের অত্যাধুনিক অস্ত্র ধরে। ক্বরনে আউওয়ালের তিন যুগে মানুষ তাদের আমলকে কোরআন সুন্নাহর সাথে মিলিয়ে দেখত যে,ঠিক আছে কি না?পরবর্তী যুগ থেকে মানুষ নিজেদের রুসমী আমলগুলোকে প্রমাণ করতে কোরআন হাদিসকে জোর করে টেনে ব্যবহার করতে শুরু করে।

বাস্তবমুখী আমলী মাদরাসা করা যেমন জরুরী, মাদরাসাকে তরজে সাহাবার সাথে মিলানো তারচে বেশি জরুরী।

এ মুহুর্তে এমন মাদরাসা খোলাতো জিহাদের শামিল! আফসোস যে,কেউতো হিম্মতই করেনা।আর কেউ আশপাশের অভিযোগ,অনুযোগ ও অসহযোগিতার ফলে হিম্মত হারিয়ে ফেলে। তাই আমাদেরকে জানতে হবে যে,আদর্শ মাদরাসার রূপরেখা কী?এবং কিভাবে ধীরে ধীরে সে এগোতে হবে।

আল্লাহ যেন কবুল করেন। আমিন

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস আজ

ইলম অর্জনের সুন্নত তরীকা

Update Time : 09:00:30 am, Friday, 19 September 2025

একজন সাধারণ মানুষের এমন প্রশ্নে আমি বিস্মিত হই যে,হজরত! ইলম শিখার সুন্নাত তরীকা কী?নামায ফরজ এবং এ ফরজ আদায়ের সুন্নাত তরীকা রয়েছে। ইলম শিক্ষা করাও ফরজ,তাহলে ইলম অর্জনের সুন্নাত তরীকা কী?অনেক হুজুরকে জিজ্ঞেস করেছি, সবাই এড়িয়ে গেছেন।

আমি বললাম,ভাই এ প্রশ্নের উত্তর দিলে আমাদের অস্তিত্ব থাকবেনা! বেদআতে হাসানার রেশমি জালে আমরা এমনভাবে আটকে গেছি যে,মূলকে বেমালুম ভুলে গেছি। মুফতী ফয়জুল্লাহ রহঃ সবসময় বলতেন,বেদআতে হাসানার শুরুটা ভাল মনে হলেও এর পরিণতি কখনো ভালো হয়না।

সাহাবায়ে কেরাম হুজুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছ থেকে যে তরীকায় ইলম শিখেছেন,ইলম অর্জনের সুন্নাত তরীকা এবং সর্বযুগে উন্নত পদ্ধতি সেটাই।

সাহাবায়ে কেরাম ইলম অর্জনের ক্ষেত্রে চার জিনিসকে সর্বপ্রথম নির্বাচন করতেন।
(১) রিজাল বা ব্যাক্তি।আমরা মাদরাসায় ইলম শিখতে যাই, উনারা বা-আমল,আহলুল্লাহকে নির্বাচন করে এমন “ব্যাক্তির”সোহবতে থেকে ইলম শিখতেন।
(২) জায়গা নির্বাচন।সাহাবায় কেরাম আমলের মা-হাওল অর্থাৎ মসজিদে ইলম শিখতেন।
(৩) সময় নির্বাচন। আমরা ইলম অর্জনের জন্য একটা বয়স এবং সে বয়সের পুরোটা সময় জীবন জগৎ থেকে একপ্রকার বিচ্ছিন্ন হয়ে ইলম অর্জন করি।নআর সাহাবায় কেরাম মাহদ সে লাহাদ, তথা বুঝতে শেখার পর থেকে মৃত্যু অবধি ইলম শিখা এবং শিখানো ছিল তাদের দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য একটি অংশ।
(৪) তালীমের সাথে দাওয়াত ও আমলের সমন্বিত মেহনত।আমরা আগে শিখি, পরে আমলের ফিকির করি। সময় থাকলে,ভালো লাগলে তবলীগ করি।অথচ সাহাবায় কেরাম আমলকেই ইলম মনে করতেন।আর যা শিখতেন এবং যখন শিখতেন,তৎক্ষনাৎ তার তবলীগকে ফরজ মনে করতেন।

সাহাবা যুগে ইলম,আমল ও দাওয়াতের মধ্যে তালাযুম ছিল,অর্থাৎ তারা একটিকে আরেকটির জন্য সম্পূরক বা অপরিহার্য মনে করতেন।আমরা তা ভাগ করে ফেলেছি।ফলে ইলমওয়ালা তবলীগওয়ালাকে এবং কখনো তবলীগওয়ালা ইলমওয়ালাকে নিজের মোকাবেল মনে করছে।

এর কারণ,আমরা তালীমের সুন্নাত তরীকা থেকে যোজন যোজন দূরে সরে এসেছি। আমাদের দাওয়াত ও ইবাদাতের সাথে তালীমের উপরও এ পরিমাণ রসম গালিব যে,আজ নকলকেই আমরা আসল মনে করছি।যুগের দোহাই দিয়ে নিত্যনতুন সংস্কারের তোড়ে বিলীন করে দিচ্ছি তালীমের ঐতিহ্য বা শাশ্বতধারা।

আমাদের কথাগুলো এজন্যই হয়ত অনেকের মনপুত হবেনা যে,কথাগুলো আকাবিরদের তরজের খেলাফ? আর সত্যি বলতে, আকাবির মানে আমরা থানভী রহঃ,সর্বোচ্চ হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহঃপর্যন্ত গিয়ে থেমে যাই। সাহাবায় কেরামকে আমরা সীমাহীন মহাব্বত করি,তবে তালীমের ক্ষেত্রে অনুসরণীয় বা অনুকরণসাধ্য আকাবির মনে করিনা। তাই কেয়ামত অত্যাসন্নের দোহাই দিয়ে অবলীলায় গা ভাসিয়ে দিচ্ছি রুসমিয়াতের গড্ডালিকাপ্রবাহে।

কেউ মূলধারার কথা বললে তাকে গলা টিপে ধরে কাফের,বাতিল? বানিয়ে দিচ্ছি ফতোয়া-সন্ত্রাসের অত্যাধুনিক অস্ত্র ধরে। ক্বরনে আউওয়ালের তিন যুগে মানুষ তাদের আমলকে কোরআন সুন্নাহর সাথে মিলিয়ে দেখত যে,ঠিক আছে কি না?পরবর্তী যুগ থেকে মানুষ নিজেদের রুসমী আমলগুলোকে প্রমাণ করতে কোরআন হাদিসকে জোর করে টেনে ব্যবহার করতে শুরু করে।

বাস্তবমুখী আমলী মাদরাসা করা যেমন জরুরী, মাদরাসাকে তরজে সাহাবার সাথে মিলানো তারচে বেশি জরুরী।

এ মুহুর্তে এমন মাদরাসা খোলাতো জিহাদের শামিল! আফসোস যে,কেউতো হিম্মতই করেনা।আর কেউ আশপাশের অভিযোগ,অনুযোগ ও অসহযোগিতার ফলে হিম্মত হারিয়ে ফেলে। তাই আমাদেরকে জানতে হবে যে,আদর্শ মাদরাসার রূপরেখা কী?এবং কিভাবে ধীরে ধীরে সে এগোতে হবে।

আল্লাহ যেন কবুল করেন। আমিন