পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত রেখে একটি স্বাধীন কাঠামোর অধীনে পরিচালনার আহ্বান জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম।
বলেন, “আমাকেও মাঝেমধ্যে শুনতে হয়‘উনি কি আমাদের লোক?’। এমন প্রশ্ন শুনে কষ্ট হয়, কারণ পুলিশের কাজ রাজনৈতিক নয়, পেশাগত।
শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে এক গোলটেবিল আলোচনায় আইজিপি এসব কথা বলেন।
আলোচনা সভার আয়োজন করে দৈনিক প্রথম আলো ও অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার কল্যাণ সমিতি। সভার বিষয় ছিল ‘বাংলাদেশ পুলিশের সংস্কার: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’।
আইজিপি বলেন, আমি মনে করি সরকারই দেশের অভিভাবক। তবে পুলিশের দায়িত্ব পালনে যেন রাজনৈতিক প্রভাব না পড়ে, সে বিষয়ে নিশ্চয়তা দরকার। যদি সত্যিকারভাবে স্বাধীন একটি বোর্ড বা ইনস্টিটিউশনাল কাঠামোর অধীনে পুলিশ কাজ করতে পারে, তবে জবাবদিহি ও নিরপেক্ষতা দুটোই নিশ্চিত হবে।
তিনি আরও বলেন, আমি ভয় পাই আমি কি পারব স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে? মামলা তদন্ত বা গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে যদি নির্দেশ আসে, তাহলে সেই স্বাধীনতা কোথায়?
বাহারুল আলম গত জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের সময়কার পরিস্থিতির উল্লেখ করে বলেন, মানুষের মধ্যে এমন ঘৃণা জমেছিল যে, অনেক জায়গায় পুলিশ থানা ছেড়ে পালিয়েছে এমন ঘটনা ১৫০ বছরে ঘটেনি। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও পুলিশ পলায়ন করেনি, কিন্তু এবার মানুষ আমাদের ওপর আস্থা হারিয়েছে। এটি আত্মসমালোচনার সময়।
সভায় উপস্থিত ছিলেন সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, মানবাধিকারকর্মী নূর খান, অধ্যাপক শাহনাজ হুদা, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা এম আকবর আলীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, শুধু পুলিশ নয়, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সংস্কারও সমান জরুরি। কারণ তাদের প্রভাবও পুলিশের কার্যক্রমকে প্রভাবিত করে।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল মন্তব্য করেন, আমার লোক তোমার লোক’ সংস্কৃতি যদি না ভাঙে, তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কখনোই জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে পারবে না।
আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, রাজনৈতিক সরকার দেশ চালাবে, কিন্তু প্রশাসনিক বা আইন প্রয়োগে প্রভাব বিস্তার করবে না এই বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা করতে পারলে পুলিশ তার প্রকৃত ভূমিকা পালন করতে পারবে। আমরা শুধু সেই আস্থাটা ফিরে পেতে চাই।
সভায় তিনি পুলিশ বাহিনীর ওপর সরকারের কর্তৃত্ব পুনর্মূল্যায়নের আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিধান অনুযায়ী পুলিশকে পরিচালনায় স্বাধীনতা দেওয়া হোক, তাহলেই জনগণের আস্থা ফিরবে।
গোলটেবিল আলোচনার সারসংক্ষেপে বক্তারা একমত হনপুলিশ সংস্কার মানে শুধু পদোন্নতি বা প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস নয়; এটি নৈতিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও রাজনৈতিক নিরপেক্ষতার বিষয়। সবার প্রত্যাশা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আবারও জনগণের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠুক।
বিশ্বাসের প্রতিধ্বনি নিউজ ডেস্ক 



















